SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or
Log in with Google Account

ষষ্ঠ শ্রেণি (মাধ্যমিক) - হিন্দু ধর্ম শিক্ষা - দ্বিতীয় অধ্যায় | NCTB BOOK

দেব-দেবী

আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি, নিরাকার ঈশ্বরের সাকার রূপ হলো দেব-দেবী। ঈশ্বরের বিভিন্ন গুণ বা শক্তি যখনই আকার পায়, তখন তাঁদের দেব-দেবী বলে। এসব দেব-দেবী ঈশ্বরের বিশেষ গুণ ও ক্ষমতার অধিকারী। তাই আমরা এই শক্তি বা গুন লাভ করার জন্য দেব-দেবীর পূজা করে থাকি। পূজার মধ্য দিয়ে আমরা তাঁদের শ্রদ্ধা জানাই। প্রার্থনা করি তাঁরা যেন আমাদের মঙ্গল করেন।

  •  পূজা

হিন্দুধর্মে ঈশ্বরকে নানাভাবে ভাবা হয়। নানাভাবে দেখা হয়। ঈশ্বর নিরাকার আবার তিনি সাকারও। ঈশ্বরকে নিরাকার ও সাকার দুভাবেই উপাসনা করা হয়। পূজা ঈশ্বরের সাকার উপাসনার একটি পদ্ধতি। পুজা শব্দের অর্থ প্রশংসা করা বা শ্রদ্ধা করা। ঈশ্বরের প্রতীকরূপে আছেন বিভিন্ন দেব-দেবী। বিভিন্ন দেব-দেবীকে আমরা স্তব-স্তুতি করি। ফুল-ফল ও নানা উপকরণ দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করি। এই স্তব-স্তুতি, শ্রদ্ধা নিবেদন করার প্রক্রিয়া হলো পূজা। পূজার সময়ে মন্ত্র পাঠ করে পুষ্পাঞ্জলি দেয়া হয়। দেবতার আরতি এবং ধ্বান করা হয়। সকল জীবের মঙ্গলের জন্য প্রার্থনা করা হয়।

পূজার প্রক্রিয়াগত দিক হলো পূজা করার রীতিনীতি। পূজার আয়োজনের বিভিন্ন দিক আছে। দেবতার প্রতিমা তৈরি আছে, পূজার উপচার আছে, তাঁর কাছে প্রার্থনা আছে। এ সকল পুজার প্রক্রিয়াগত দিকের সঙ্গে যুক্ত দেশ ও অঞ্চলভেদে পূজাপদ্ধতির বিভিন্নতা আছে। তবে পূজা করার মৌলিক দিকগুলোর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। আবাহন, অর্ধা প্রদান, ধ্যান, পূজা, পুষ্পাঞ্জলি, প্রার্থনামন্ত্র, প্রণামমন্ত্র ইত্যাদি পূজার বিভিন্ন অঙ্গ। আমরা প্রতিদিন পূজা করি। আবার প্রতি তিনি ভেদে, মাস ও বছরের বিশেষ সময় অনুসারে বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজার আয়োজন করা হয়। দেব-দেবী অনুসারে পূজা পদ্ধতি ও মন্ত্র পৃথক হয়ে থাকে। তবে যে-কোনো দেব-দেবীর পূজা করার ক্ষেত্রে কতগুলো সাধারণ নিয়ম থাকে। তা অবশ্যই অনুসরণ করতে হয়। সাধারণভাবে এই নিয়ম- নীতিগুলোকে পূজাবিধি বলে।

 

  •  পূজার পুরুত্ব

মানুষ সামাজিক জীব। সমাজবন্ধভাবে বাস করাই মানুষের প্রকৃতি। ধর্ম সমাজকে সুগঠিত করে গড়ে তোলে। আধ্যাত্মিক ও আর্থসামাজিক দিক থেকে পূজা-পার্বণ যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে। পূজা-পার্বণের মাধ্যমে সামাজিক মিলনের সৃষ্টি হয়। সকলে মিলে যখন পূজা করা হয় তখন পূজা হয়ে ওঠে পার্বণ বা উৎসবমুখর।

প্রতিমা আনয়ন, পূজার উপকরণ সংগ্রহ, মন্দিরে পূজার সাজসজ্জা, ধূপের গন্ধ, আরতি, প্রসাদ বিতরণ, নতুন পোশাক-পরিচ্ছদ পরিধান প্রভৃতি আমাদের মনে সুন্দর ও পবিত্র ভাবের সৃষ্টি করে। এর ফলে আমাদের ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দের ভাব জাগ্রত হয়।

পূজার মাধ্যনে মনের সৌন্দর্যের সঙ্গে একাগ্রতাও সৃষ্টি হয়। পূজায় অভীঃ দেবতার প্রতি একাগ্রতা ও ভক্তি জাগ্রত করে। পূজা উপলক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যেমন: ধর্মীয় আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মেলা ইত্যাদি। অনেকে স্মরণিকাও প্রকাশ করে থাকেন। পূজা-পার্বণ উপলক্ষ্যে এসব আয়োজন আমাদের সাংস্কৃতিক চেতনার বিকাশ ঘটায়।

পূজা-পার্বণে পারিবারিক, সামাজিক পর্যায়েও উন্নত খাবারদাবারের আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন পূজায় ঋতুভিত্তিক বিভিন্ন ধরনের ফল যাওয়া হয়। কারণ প্রত্যেক পূজায় কিছু সুনির্দিষ্ট ফলের প্রয়োজন হয়। পূজায় বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদেরও প্রয়োজন হয়, যা পূজার উপকরণ হিসেবে বিবেচিত।

  •  নিম্নে গণেশ দেবতা ও সরস্বতী দেবীর বর্ণনা করা হলো।

 

  • গণেশ দেবতা

গণেশ আমাদের একজন অতি পরিচিত দেবতা। গণেশকে বিঘ্ননাশকারী, সিদ্ধিদাতা বা সফলতার দেবতারূপে পূজা করা হয়। বিভিন্ন শুভকার্য, উৎসব ও অনুষ্ঠানের শুরুতে গণেশ পূজা করতে হয়। গণেশদের- গণপতি, বিনায়ক, গজানন, একদন্ত, হেরম্ব প্রভৃতি নামেও পরিচিত। পণেশ দেবের শরীর মানুষের মতো। কিন্তু উপর অংশে আছে গজ বা হাতির মাথা। এজন্য গণেশকে গজানন বলা হয়। তাঁর চার হাত এবং তিনটি চোখ। তাঁর শরীর মোটা ও উপর লম্বা। মানব কল্যাণের জন্য এক হাতে তিনি ধারণ করেছেন বরণমুদ্রা। তাঁর বাহন হলো মুষিক (ইঁদুর। গণেশ দেবতা মানুষের সকল বাধাবিপত্তি দূর করেন। সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্য দান করেন। এ কারণে যেকোনো কাজ আরম্ভ করার পূর্বে গণেশ দেবতার পূজা করা হয়। হিন্দুধর্মাবলম্বী ব্যবসায়ীরা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে গণেশ দেবতার ছবি বা প্রতিমা সংরক্ষণ করেন। তাঁরা বাংলা নববর্ষে হালখাতার উদ্বোধন করেন। সিদ্ধদাতা গণেশ দেবতার পূজার মাধ্যমে। ধর্মগ্রন্থে গণেশ দেবতার জ্ঞান ও বীরত্বের অনেক কাহিনি আছে।

 

  • পূজা পদ্ধতি

ভাই ও মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের চতুর্থী তিথিতে গণেশ দেবের পূজা করা হয়। এছাড়া যে-কোনো পূজা করার আগে গণেশ দেবের পূজা করার রীতি রয়েছে। পূজা যথাযথভাবে সমাপ্ত করার জন্য পূজার উপকরণ সংগ্রহ করতে হয়। যেমন: দুর্বা, লাল ফুল, পান পাতা, সুপারি, গ্রুপ, নারকেল, লাল চন্দন, মোদক (মিষ্টি), আরতি থালা, ফলমূল ইত্যাদি। এরপর শুদ্ধ আসনে বসে গণেশের বন্দনা করতে হয়। "ওম গণপতয়ে নমঃ” উচ্চারণের মাধ্যমে গণেশ বন্দনা করতে হয়। ধূপ, দীপ জ্বালিয়ে নানা উপচার দিয়ে পূজা আরম্ভ করতে হয়। এরপর গণেশ দেবের ধ্যান, পুষ্পাঞ্জলি প্রদান ও প্রণাম মন্ত্র পাঠ করতে হয়।

  • প্রণাম মন্ত্র 

একদন্তং মহাকায়ং লম্বোদরং গজাননম্

 বিঘ্ননাশকরং দেবং হেরম্বং প্রণমাম্যহম্ ।।

শব্দার্থ : একদন্তং- এক দাঁত মহাকায়ং- বিশাল শরীর: লম্বোদরং (লু+উদরং) - বড় পেট গজাননম্ (গজ+ আননম্) - গল্প- হাতি; আনন- মুখ: বিঘ্ননাশকরং- বিঘ্ন নাশকারী; দেবং- দেবতা; হেরম্বং- হেরম্ব; প্রণামামাহ ( প্রণমামি + অহম্) প্রণমামি প্রণাম করি; অহম্ আমি।

•• সংস্কৃত ব্যাকরণ অনুসারে এখানে অনুস্বারযুক্ত সব শব্দ একবচনে দ্বিতীয়া বিভক্তি হয়েছে। 

সরলার্থ: যিনি এক দাঁত বিশিষ্ট, যাঁর শরীর বিশাল, লম্বা উদর, যিনি গজানন এবং বিঘ্ননাশকারী, সেই হেরম্বদেব গণেশকে প্রণাম জানাই।

  •  গণেশ দেবের পূজার শিক্ষা

গণেশ মূলত বিঘ্ননাশকারী দেবতা। তাই গণেশ দেবের পূজা করলে সকল প্রকার বাধা দূর হয় এবং যেকোনো কাজে সফলতা আসে। গণেশ পূজা করলে সংসারে সুখ-সমৃদ্ধি আসে। তাই হিন্দুধর্মে যে কোনো পূজার আগে গণেশ পূজা করতে হয়। সকল কাজের আগে গণেশ দেবতাকে স্মরণ বা পূজা শুভকর ও মঙ্গলজনক। তাই যে-কোনো কাজ আরম্ভ করার সময় আমরা পণেশ দেবকে স্মরণ করব। পূজার বিধান অনুসারে ভক্তি সহকারে তাঁর পূজা করব।

  • সরস্বতী দেবী

জ্ঞান, প্রজ্ঞা, বিদ্যা ও সুরের দেবী হলেন সরস্বতী। তিনি বিদ্যাদাত্রী ও জ্ঞানদাত্রী। জ্ঞান হচ্ছে আলো যা অন্ধকার দূর করে। জ্ঞানের আলোয় অজ্ঞানতার অন্ধকার, বিদ্যার আলোয় অবিদ্যার অন্ধকার যিনি দূর করে দেন, তিনিই হলেন দেবী সরস্বতী। সরস্বতী দেবী বাগ্দেবী, বীণাপাণি, সারনা, শতরূপা, বিরজা, মহাশ্বেতা, ব্রাহ্মী প্রভৃতি নামেও পরিচিত।

সরস্বতী দেবীর বসন শুভ্র বা সাদা। তাঁর গায়ের রং চন্দ্রের কিরণের মতো শুভ্র। তাঁর হাতে থাকে বীণা ও পুস্তক। রাজহংস তাঁর বাহন। তাঁর গলায় থাকে অক্ষমালা বা মুক্তার মালা। সাদা পদ্মফুল বেষ্টিত তাঁর আসন। শুভ্রবর্ণ

হচ্ছে সত্ত্বগুণের প্রতীক। সত্ত্বগুণ হচ্ছে পবিত্রতা, স্বচ্ছতা ও নির্মলতার প্রতীক। তাই সরস্বতী দেবীর শুভ্রবর্ণ প্রকৃত জ্ঞানের ও বিশুদ্ধতা নির্দেশ করে।

  • পূজা পদ্ধতি

মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী দেবীর পূজা করা হয়। পারিবারিক এবং সামাজিকভাবে সরস্বতী পূজা করা যায়। স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাড়ম্বরে সরস্বতী দেবীর

পূজা করা হয়। প্রতিমার মাধ্যমে দেবীর সাকার রূপ গড়ে নিয়ে সাধারণত পূজা করা হয়। পূজার পদ্ধতি হিসেবে মণ্ডপ সাজানো, পূজার উপকরণ (পলাশ ফুল, গাদা ফুল, বেলপাতা, ধান, যব, দূর্বা, আম্রপল্লব, কুলসহ নানা প্রকার ফল, দোয়াত-কলম প্রভৃতি) সংগ্রহ করতে হয়। এরপর শুদ্ধ আসনে পূর্ব বা উত্তর মুখে বসে আচমন করে সংকল্প করতে হয়। এরপর দেবীর ঘট স্থাপন করে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করতে হয়। অর্থাৎ দেবীকে আমন্ত্রণ জানাতে হয়। মন্ত্র পাঠ করে দেবীর পূজা করতে হয়। এ সময় শঙ্খ, ঘণ্টা ও উলুধ্বনি দিতে হয়। পূজার রীতি হিসেবে সরস্বতী দেবীর ধ্যান, পুষ্পাঞ্জলি প্রদান ও প্রনাম মন্ত্র পাঠ করতে হয়।

 

  • পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র

ওঁ সরস্বত্যৈ নমো নিত্যং ভদ্রকাল্যৈ নমো নমঃ।

 বেদ-বেদান্ত-বেদাঙ্গ-বিদ্যাস্থানেভ্য এব চ।।

 এর সচন্দন-বিল্বপত্র-পুষ্পাঞ্জলিঃ ঐং সরস্বত্যৈ নমঃ

শব্দার্থ: সরস্বত্যৈ- সরস্বতীকে নমো নমঃ নমস্কার; নিত্যং সর্বদা; ভদ্রকাল্যৈ ভদ্রকালীকে বিদ্যাস্থানেভ্যঃ- বিদ্যাস্থানীয় বিদ্যাসমূহকে সচন্দন- চন্দনযুক্ত; বিল্বপত্র-বেলপাতা। সরলার্থ দেবী সরস্বতী, ভদ্রকালীকে সর্বদা প্রনাম করি। বেদ, বেদান্ত, বেদাঙ্গ ইত্যাদি বিদ্যাস্থানকেও প্রণাম করি। চন্দনযুক্ত বিলপত্র ও পুষ্পের অঞ্জলি দিয়ে সরস্বতী দেবীকে প্রণাম জানাই।

  •  প্রণাম মন্ত্র 

ওঁ সরস্বতি মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে। 

বিশ্বরূপে বিশালাঙ্কি বিদ্যাং দেহি নমোহস্তুতে।।

শব্দার্থ সরস্বতি হে সরস্বতী মহাভাগে- মহাভাগ; বিদ্যে বিদ্যা; কমললোচনে- পদ্মের মতো চোখ; বিশ্বরূপে- বিশ্বরূপ বিশালাঙ্কি- বিশালাক্ষী। বড়ো চোখ যার); বিদ্যাৎ- বিদ্যা: দেহি দাও: নমোহস্তু (নমঃ + অণু)- নমস্কার; তে তোমাকে।

•• এখানে সবগুলি শব্দ সম্বোধনে আছে। স্ত্রীলিঙ্গ আগে) কারও শব্দের সম্বোধনের একবচনে এর কার এবং গী-কারন্ত শব্দের সম্বোধনের ই-কার হয়।

সরলার্থ : হে মহাভাগ বিদ্যাদেবী সরস্বতী, কমলনয়না, তুমি বিশ্বরূপা। বিশাল তোমার চোখ। তুমি বিদ্যাদান করো। তোমাকে প্রণাম করি।

 

  • সরস্বতী দেবীর পূজার শিক্ষ

সরস্বতী বিদ্যার দেবী। সরস্বতী পূজার মাধ্যমে মনের অন্ধকার বা অজ্ঞতা দূর হয়। জ্ঞান বিকাশের জন্য বিদ্যাদেবীর কাছে প্রার্থনা করা হয়। বিদ্যাদেবীর পূজা করে বিদ্যার্থীদের জ্ঞান আহরণের অনুরাগ বেড়ে যায়। সামাজিক দিক থেকে সরস্বতী পূজার গুরুত্ব অনেক বেশি। স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দুধর্মাবলম্বী ছাত্র- ছাত্রীরা এ দিনটি অত্যন্ত ভক্তি ভরে উদযাপন করে থাকে। সরস্বতী পূজার মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বিদ্যা অর্জনের একাগ্রতা বৃদ্ধি পায়। তাদের মধ্যে এমন দৃঢ় মনোবল তৈরি হয় যে, তারা ভবিষ্যৎ স্বপ্ন পুরণের জন্যও আশান্বিত হয়ে ওঠে। তাই তারা বিদ্যাদেবী সরস্বতীর কাছে বিনীতভাবে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করে।

সরস্বতী পূজার দিনে সমাজের সকল শ্রেণির পূজারীরা বিভিন্ন পূজামন্ডপে দেবীর চরণে পুষ্পাঞ্জলি দেয়ার জন্য মিলিত হয়। মিলিত হয়ে ভারা নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ চারিতায় মেতে ওঠে। যা জ্ঞান বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। অপরদিকে পারস্পরিক কুশল বিনিময়ে সকলের মধ্যে পারিবারিক বন্ধন সু হয়। সম্পর্কের গভীরতা বৃদ্ধি পায়। পুজারী ছাড়াও অনেকে পূজার স্থানে আসে। এতে সবার সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক তৈরি হয়। এই সুসম্পর্ক সমাজকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে সহায়তা করে।

পার্বণ
পার্বণ হলো কোনো পর্বকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠান বা উৎসবের আয়োজন। উৎসব মানে আনন্দময় অনুষ্ঠান। আমরা পূজা-পার্বণ বলতে বুঝি, যে পর্বগুলো পূজা অনুষ্ঠানকে আনন্দময় করে। দেব-দেবীর প্রতি গভীর ভক্তির সৃষ্টি করে। পূজা-পার্বণের মধ্যে রয়েছে প্রতিমা নির্মাণ। মন্দির বা ঘর সাজানো। বিভিন্ন ধরনের- বাদ্যের আয়োজন করা। বিশেষ করে ঢাক, ঢোল, ঘন্টা, করতাল, কাঁসি, শঙ্খ ইত্যাদি বাল্ব বাজানো। সকলের সাথে ভাববিনিময়, নানা ধরনের খাওয়া-দাওয়া, বিভিন্ন ধরনের আনন্দমূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন, উন্নত ও পরিচ্ছন্ন পোশাক-পরিচ্ছদ পরিধান করা ইত্যাদিও পার্বনের অঙ্গ।

  • নবান্ন

আবহমান বাংলার একটি ঐতিহ্যবাহী সর্বজনীন উৎসব হলো নবান্ন। নবান্ন শব্দের অর্থ নতুন অ্য। অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম দিনটি নবান্ন উদযাপন দিন হিসেবে পরিচিত। অগ্রহাল মাসে আমন ধান কাটার পর এই পার্বন পালন করা হয়। আমন ধান কাটার পর নতুন ধানের চাল দিয়ে তৈরি অন্ন, নানা রকম পিঠা-পায়েস প্রভৃতি দিয়ে যে মাঙ্গলিক উৎসব করা হয় তারই নাম নবান্ন। তখন চারদিকে বাতাসে উড়ে বেড়ায় নতুন ধানের গন্ধ। এটি ঋতুভিত্তিক অনুষ্ঠান। এদিন শস্যের অধিষ্ঠাত্রী দেবী শ্রীলক্ষ্মীর পূজা করা হয়।

 

  • পৌষসংক্রান্তি

বাংলা মাসের শেষ দিনকে বলা হয় সংক্রান্তি। বাঙালি সংস্কৃতিতে পৌষসংক্রান্তি একটি বিশেষ পার্বণের দিন। সংক্রান্তি শব্দটি কোথাও কোথাও 'সাকরাইনা নামে পরিচিত। তবে বাঙালি সমাজে পৌষসংক্রান্তি ও চৈত্রসংক্রান্তি এ দুটি উৎসবই উল্লেখযোগ্য। পৌষ পার্বণ বা পৌষসংক্রান্তিকে মকর সংক্রান্তিও বলা হয়। বাংলা পৌষ মাসের শেষ দিনে পৌষসংক্রান্তি পালন করা হয়। এই দিন বাঙালিরা পিঠা উৎসব, ঘুড়ি ওড়ানো সহ নানারকম উৎসবের আয়োজন করে। আনন্দে মেতে ওঠে।

নিচের বাক্যগুলো থেকে শুদ্ধ/অপুষ্ঠ নির্ণয় করি।

  • গণেশ দেবের শরীর হাতির মতো।
  •  বিদ্যার আলো দিয়ে অবিদ্যার অন্ধকার দূর করেন সরস্বতী দেবী।
  • নবান্নে দেবী শ্রীলক্ষ্মীর পূজা করা হয় কারণ তিনি শক্তির দেবী।
  •  পৌষসংক্রান্তি একটি পার্বণ
  •  সকল কাজের পরে গণেশ দেবতাকে স্মরণ বা পূজা শুভকর ও মঙ্গলজনক।

 

Content added By
Promotion